৬ই বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ |  

ভূমিকা

ঘুমের সময়ে চুলের যত্ন: সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর চুল সবারই কাম্য। কিন্তু আমরা অনেকেই দিনের ব্যস্ততায় চুলের যত্ন নিতে ভুলে যাই। অথচ রাতে ঘুমানোর সময় কিছু সহজ অভ্যাস মেনে চললে চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখা সম্ভব। চুল পড়া, ভেঙে যাওয়া, খুশকি ও মাথার ত্বকের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে ঘুমের সময় চুলের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই আর্টিকেলে আমরা জানবো, কীভাবে রাতের বেলায় সঠিক অভ্যাস মেনে চুলের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়।

১. ভেজা চুলে ঘুমানো এড়িয়ে চলুন

অনেকেই রাতে গোসল করে ভেজা চুলেই ঘুমিয়ে পড়েন। এটি চুলের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। যুক্তরাষ্ট্রের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. লিন্ডজি মেরি জুব্রিটস্কি বলেন, “ভেজা চুল খুবই নাজুক থাকে, কারণ পানির সংস্পর্শে চুলের প্রোটিন বন্ধন দুর্বল হয়ে যায়। ফলে চুল সহজেই ভেঙে যেতে পারে।”

এছাড়া, ভেজা চুলের গোড়ায় আর্দ্রতা জমে থাকলে মাথার ত্বকে ফাঙ্গাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে, যা সেবোরিয়েক ডার্মাটাইটিস (এক ধরনের ত্বকের সমস্যা) সৃষ্টি করে। এই সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে গোসলের পর চুল শুকিয়ে নিন বা হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে অতিরিক্ত পানি শুষে নিন।

২. খোলা চুলে না ঘুমানো

অনেকে মনে করেন, চুল বাঁধলে চুল পড়ে যায়। কিন্তু রাতে খোলা চুলে ঘুমালে চুলের ক্ষতি বেশি হয়। কারণ, ঘুমের মধ্যে চুল বালিশের সঙ্গে ঘষা খায়, ফলে চুল জট পেকে যায়, ভেঙে যায় এবং রুক্ষ হয়ে উঠে

সমাধান:

  • চুল হালকা করে বেণি বা লুজ পনিটেইল করে ঘুমান।
  • সিল্ক বা সাটিনের স্কার্ফ ব্যবহার করুন, যা ঘর্ষণ কমায়।

৩. শক্ত করে চুল বাঁধা থেকে সতর্ক থাকুন

অনেকে রাতে টাইট করে বেণি বা বান করে ঘুমান, যা চুলের গোড়ায় চাপ সৃষ্টি করে। দীর্ঘদিন এভাবে ঘুমালে ট্র্যাকশন অ্যালোপেসিয়া (চুল পড়ার এক ধরনের সমস্যা) হতে পারে।

বিশেষজ্ঞ পরামর্শ:

  • চুল আলগাভাবে বাঁধুন।
  • সিল্কের স্ক্রাঞ্চি ব্যবহার করুন, যা চুলের গোড়ায় চাপ কমাবে।

৪. সিল্ক বা সাটিনের বালিশ কভার ব্যবহার করুন

তুলার বালিশ কভার নরম হলেও এটি চুলের আর্দ্রতা শুষে নেয় এবং ঘর্ষণ বাড়ায়। ফলে চুল শুষ্ক ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে।

ঘুমের সময়ে চুলের যত্ন গবেষণা বলছে:
ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব উইমেন্স ডার্মাটোলজি (২০২১) অনুসারে, সিল্ক বা সাটিনের বালিশ কভার চুলের জন্য বেশি উপকারী, কারণ এগুলো:

  • ঘর্ষণ কমায়
  • চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখে
  • জট পড়া রোধ করে

৫. প্রসাধনী লাগিয়ে ঘুমানো থেকে বিরত থাকুন

হেয়ার জেল, স্প্রে বা মুস লাগিয়ে ঘুমালে মাথার ত্বকের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়, যা স্ক্যাল্প অ্যাকনি (মাথায় ব্রণ) এবং চুলকানি সৃষ্টি করে।

কী করবেন?

  • রাতে ঘুমানোর আগে চুল থেকে প্রসাধনী ধুয়ে ফেলুন।
  • হালকা কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
  • ড্রাই শ্যাম্পু ব্যবহার করে অতিরিক্ত তেল দূর করুন।

৬. পুষ্টিকর খাবার ও পর্যাপ্ত পানি পান করুন

ঘুমের সময় শরীর পুনরুজ্জীবিত হয়, তাই চুলের বৃদ্ধির জন্য সঠিক পুষ্টি জরুরি।

চুলের জন্য উপকারী খাবার:

  • প্রোটিন: ডিম, মাছ, ডাল
  • ওমেগা-৩: আখরোট, সামুদ্রিক মাছ
  • বায়োটিন: ডার্ক চকলেট, বাদাম
  • আয়রন: পালং শাক, কুমড়ার বীজ

৭. নিয়মিত চুল ও স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করুন

ঘুমানোর আগে নারিকেল বা অ্যারগান অয়েল দিয়ে হালকা ম্যাসাজ করলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং চুলের গোড়া শক্ত হয়।

উপসংহার

রাতের ঘুম শুধু শরীরের ক্লান্তি দূর করে না, চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ভেজা চুল এড়ানো, সিল্কের বালিশ কভার ব্যবহার, প্রসাধনী পরিষ্কার করা এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আপনি চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করতে পারেন। আজ থেকেই এই অভ্যাসগুলো মেনে চলুন এবং সুন্দর, স্বাস্থ্যবান চুলের অধিকারী হোন!


ঘুমের সময়ে চুলের যত্ন: স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ
প্রকাশিত: ২৫ মার্চ ২০২৫

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version